পাকিস্তানের জন্য সহজ হল কোয়ার্টার ফাইনাল

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রোমাঞ্চকর এক জয় নিয়ে পাকিস্তানীদের চোখ এখন কোয়ার্টার ফাইনালে। চলতি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বি’ গ্রুপ থেকে শেষ আটের জোরালো দাবিদার হয়ে উঠেছে আইসিসির সহযোগী দেশ আয়ারল্যান্ডও।
শনিবার অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে অনুষ্ঠিত বৃষ্টি বিঘ্নিত কার্টেল ওভারের ম্যাচ নির্ধারিত হয় ৪৭ ওভারে। টসের বিপরীতে প্রথমে ব্যাটিং পাওয়া পাকিস্তান ৪৬.৪ ওভারেই সবকটি উইকেটের বিনিময়ে ২২২ রান সংগ্রহ করে। কিন্তু জবাবে ডাক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ম্যাচের ওভার কর্তন করে প্রোটিয়াদের সামনে লক্ষ্য স্থির হয় ৪৭ ওভারে ২৩২ রান। তবে উইকেট বিপর্য়য়ে পড়ে ওই লক্ষ্য আর পুরণ করা সম্ভব হয়নি দক্ষিণ আফ্রিকার। ৩৩.৩ ওভারে ২০২ রান সংগ্রহ করতেই তারা সবকটি উইকেট হারিয়ে বসে। ফলে ২৯ রানের জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এদিন পাকিস্তানের হয়ে ব্যাটিং যুদ্ধে আবারো নিজকে প্রমাণ করেন অধিনায়ক মিসবাহ-উল হক। সর্বোচ্চ ৫৬ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। অপরদিকে প্রোটিয়া দলের হয়ে লড়াই করেছেন অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স। যার ব্যাট থেকে এসেছে সর্বাধিক ৭৭ রান। তাই ম্যাচটি এক পর্যায়ে দুই অধিনায়কের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে, যেখানে শেষ হাসিটি হেসেছেন মিসবাহ। ম্যাচে পাকিস্তান শিবিরে তিন উইকেট করে সংগ্রহ করেছেন মোহাম্মদ ইরফান, রাহাত আলী ও ওয়াহাব রিয়াজ। আর দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ডেল স্টেইন ৩টি এবং কাইল এ্যাবট ও মর্নে মরকেল ২টি করে উইকেট লাভ করেন।
এই ম্যাচটি দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে পৌছানোর সুযোগ ছিল। কিন্তু পরাজয়ের ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে সমান সংখ্যক ৬টি করে পয়েন্ট সংগৃহীত হয়েছে দলটির। এদিকে আয়ারল্যান্ডও জিম্বাবুয়েকে ৫ রানে হারিয়ে দেয়ায় তাদের পয়েন্ট সংখ্যাও এখন ৬।
প্রথমে ব্যাটিং পাওয়া পাকিস্তান ইনিংসকে ভালভাবেই টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন দুই ওপেনার সরফরাজ আহমেদ ও আহমেদ শেহজাদ। দলীয় ৩০ রানে শেহজাদ ব্যক্তিগত ১৮ রানে এ্যাবটের শিকার হয়ে প্যাভিলিয়নের ধরলেও অপর প্রান্তটি বেশ কিছ সময় আগলে রেখেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার পাওয়া সরফরাজ। এরপর ইউনিস খানের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে জুটিবদ্ধ হয়ে তিনি দলীয় সংগ্রহশালায় যোগ করেন আরো ৬২ রান। সর্বমোট ৪৯ রান সংগ্রহকারী সরফরাজ ওই জুটিতে যোগান দিয়েছেন ৩৯ রানের। তবে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রান রাউটের শিকার হয়ে সরফরাজ বিদায় নেয়ার পর অধিনায়ক মিসবাহ এসে জুটি বাঁধেন ইউনিস খানের সঙ্গে। সিনিয়র ব্যাটসম্যান ইউনিস দলকে ১৩২ রানে পৌছে দিয়ে ব্যক্তিগত ৩৭ রানে সাজ ঘরে ফেরার পর আসল সংগ্রামে নামতে হয় পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহকে। সোয়েব মাকসুদ (৮), উমর আকমল (১৩) , শহিদ আফ্রিদী (২২) এবং ওহাব রিয়াজের সঙ্গে ছোট্ট ছোট্ট জুটি বেঁধে তিনি পাকিস্তান ইনিংসকে পৌঁছে দেন সম্মানজনক অবস্থানে। শেষ পর্যন্ত স্টেইনের শিকার হয়ে মিসবাহ যখন ব্যক্তিগত ৫৬ রানে ক্রিজ ছাড়েন তখন ২১৮ রানে পৌছে যায় পাকিস্তান। টেল এন্ডাররা দলীয় ইনিংসে যোগ করেছেন আর মাত্র ৪ রান।
জবাবে প্রোটিয়াদের উইকেট পতন শুরু হয় ইনিংসের দ্বিতীয় বলের মাথায়। মোহাম্মদ ইরফানের বলে কোনো রান না করেই ফিরে যান কুইন্টন ডি কক। এরপর দলকে সঠিক পথে ফেরানোর চেষ্টা করেন ফাফ ডু প্লেসিস ও হাশিম আমলা জুটি। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তার যোগ করেন ৬৭ রান। শেষ পর্যন্ত জুটিটি ভাঙ্গেন রাহাত আলী। রাহাতের বলে সাজ ঘরে ফেরার আগে ডু প্লেসিসর সংগ্রহ করেন ২৭ রান। এরপরই খেই হারিয়ে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। মাত্র ১০ রানের ব্যবধানে হারিয়ে বসে ৪ উইকেট।
দলের এমন বিপর্যয়ে হাল ধরেন অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স। লড়াই চালিয়ে গেছেন একাই। প্রচন্ড চাপের মধ্যে থেকেও রানের চাকা সচল রাখেন তিনি। জেপি ডুমিনির সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ২৫, ডেল স্টেইনের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ৩৬, কাইল এ্যাবটের সঙ্গে ৮ম উইকেটে ৩৪ এবং মরনে মরকেলের সঙ্গে ৯ম উইকেটে ২৯ রানের ছোট ছোট জুটি গুলো পথ দেখাচ্ছিল প্রোটিয়াদের।
কিন্তু সোহেল খানের বলে উইকেটরক্ষক সরফরাজ আহমেদের হাতে তিনি ক্যাচ তুলে দিয়েই ম্যাচের গতি পাল্টে দেন। বিদায়ের আগে অধিনায়কের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭৭ রান। এর ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস থেমে যায় ৩৩.৩ ওভারে ২০২ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
পাকিস্তান ২২২/১০, ৪৬.৪ ওভার (মিসবাহ ৫৬, সরফরাজ ৪৯, ইউনিস ৩৭; স্টেইন ৩/৩০)।
দক্ষিণ আফ্রিকা ২০২/১০, ৩৩.৩ ওভার (ডি ভিলিয়ার্স ৭৭, আমলা ৩৮; রাহাত ৩/৪০)।
ফল : পাকিস্তান ২৯ রানে জয়ী (ডার্ক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতি)।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : সরফরাজ আহমেদ (পাকিস্তান)।